ল্যাপটপ চালু হচ্ছে না? জেনে নিন কিভাবে করবেন প্রাথমিক ট্রাবলশ্যুটিং
মাস্টার্সের রিসার্চ পেপার নিয়ে কাজ করছেন প্রায় মাসখানেক ধরে বা অফিসের কোন একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রচুর ডাটা সংগ্রহ করে রেখেছেন। একদম প্রেজেন্টেশনের আগ-মূহুর্তে বিগড়ে বসল ল্যাপটপটা.. জীবনে কখনো এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। Murphy’s law বিশ্বাস করেন আর না ই করেন, এমন কিছু পরিস্থিতির জন্য আমাদের সব সময়ই প্রস্তুত থাকতে হয়।
আজ কথা হবে, হঠাৎ আপনার ল্যাপটপটি চালু না হলে কি করবেন? কাছাকছি কোন একটা রিপেয়ার শপে নিয়ে যাবার আগেই এটাকে প্রাথমিক কিছু ট্রাবলশ্যুট করে কাজের উপযোগী করে তুলতে পারলে মন্দ কি? এর জন্য আপনাকে মেকানিক হতে হবে না। কেবল কয়েকটা সহজ ধাপ অনুসরণ করেই আপনি এই সমস্যাটি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
প্রাথমিক ট্রাবলশ্যুটিং কীভাবে করবেন?
শুরুতেই বলে নেয়া দরকার— আপনার ল্যাপটপটি এখনও ওয়ারেন্টির আওতাধীন থাকলে, যে কোন কিছু করার আগে ওয়ারেন্টি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া ল্যাপটপে বড় কোন সমস্যা থাকলে, সেটাও সাধারণত ওয়ারেন্টি পরিসেবার আওতাধীন। তাই নিজে নিজে কিছু করে ব্র্যান্ড বা সার্ভিস ওয়ারেন্টির সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আর পরিস্থিতি যত জটিলই হোক না কেন, আতঙ্কিত হওয়া চলবে না।
খুব দুর্ভাগ্য না হয়ে থাকলে, আপনার হার্ডডিস্ক সুরক্ষিত আছে। অর্থ্যাৎ, প্রয়োজন হলে আপনার হার্ডডিস্কটি অন্য একটি পিসিতে কানেক্ট করে জরুরী সব তথ্য-ফাইল-পত্র সহজেই ফিরে পাবেন। এমনকি যদি হার্ডডিস্কেও সমস্যা হয়ে থাকে; তাহলেও.. তবে এক্ষেত্রে আপনাকে কিছুটা কষ্ট করতে হবে। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান হার্ডডিস্ক রিকভারি সাপোর্ট দিয়ে থাকে, যারা নষ্ট বা Bad Sector পড়ে যাওয়া হার্ডডিস্ক থেকেও তথ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। খুব জরুরী তথ্য থাকলে এরকম কোন একটা প্রতিষ্ঠানে আপনার হার্ডডিস্কটি নিয়ে গেলে সমাধান পেতে পারেন।
এবার ঠান্ডা মাথায়, চলুন শুরু করা যাক ল্যাপটপ ট্রাবলশ্যুটিং..
বাহ্যিক আঘাত বা ক্ষয়ক্ষতি খুঁজে দেখা
শেষবার কাজ করার সময়ও ল্যাপটপটি স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন হঠাৎ স্টার্ট হচ্ছে না। হতে পারে আপনার অবর্তমানে ল্যাপটপটিতে কোন বাহ্যিক আঘাত লেগেছে বা তার উপরে পানি পড়েছে। তাই শুরুতেই ল্যাপটপটি উল্টেপাল্টে ভাল করে দেখে নিন, এতে বাহ্যিক আঘাতের কোন চিহ্ন আছে কিনা। ল্যাপটপের পোর্টগুলি বা সাউন্ডহোল চেক করে দেখুন কোথাও পানি লেগে আছে কিনা। বাহ্যিক আঘাত থাকলেও আমরা ট্রাবলশ্যুটিংয়ের পরবর্তী ধাপে এটাকে স্টার্ট করার চেষ্টা করে দেখব। তবে, পানি লেগে থাকলে সাবধান! কোনভাবেই পানিমুক্ত না করে ল্যাপটপটি চালু করার চেষ্টা করবেন না। সম্ভব হলে, ল্যাপটপের উপরের কেসিংটি খুলে এটার ভেতর-বাহির শুকনো কাপড় দিয়ে ভাল করে মুছে ফেলুন। সেটা না করতে পারলে, ল্যাপটপটি একটি শুষ্ক স্থানে অন্তুত ৪/৫ ঘন্টা রেখে দিন; যাতে ভেতরে ঢুকে পড়া পানিটুকু পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ভালভাবে শুকিয়ে গেলে এবার চলুন পরের ধাপে..
যাবতীয় External device গুলো খুলে ফেলা
ল্যাপটপের সঙ্গে লাগানো Keyboard, Mouse, SSD, External Hard Drive, Pendrive বা অন্য কোন Peripherals যুক্ত থাকলে সেগুলো খুলে ফেলে ল্যাপটপটিকে চালু করার চেষ্টা করুন। অনেক সময়ে এ ধরণের External device গুলো ল্যাপটপ boot করার সময় সমস্যা তৈরি করে।
Power Adapter এবং Battery পরীক্ষা
ল্যাপটপের Power Adapter চেক করে দেখুন, সেখানে কোন আঘাত বা সমস্যা চোখে পড়ে কিনা। তেমন কিছু পাওয়া না গেলে, এটাকে সাবধানে ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করুন। এবার পর্যায়ক্রমে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
- স্বাভাবিকভাবে চার্জিং লাইটটি জ্বলে উঠলে তো বোঝা গেল— Power Adapter ঠিক আছে, সমস্যাটা অন্য কোথাও। কিন্তু সেটা না হলে, Power Cord-এর প্লাগ এবং পিনগুলো শুকনো কাপড় দিয়ে ভাল করে মুছুন। তারের জয়েন্টের জায়গাগুলো ভাল করে নেড়ে-চেড়ে দেখতে পারেন, তারের ভিতরে কোথাও লুজ কানেকশন হচ্ছে কিনা।
- ঘরের অন্য একটি পোর্টে চার্জ দেয়ার চেষ্টা করে নিশ্চিত হোন, আপনার ব্যবহৃত পাওয়ার সকেটটি সচল আছে কিনা।
- সম্ভব হলে, অন্য একটি Power Adapter দিয়ে চার্জ করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তাতে সমস্যা মিটে গেলে, Adapter টি পরিবর্তন করুন। চেষ্টা করবেন, ভাল মানের অরিজিনাল Adapter ব্যবহার করতে।
- ল্যাপটপের ব্যাটারীটি Removeable হলে, ব্যাটারী খুলে ফেলুন। এবার শুধু Power Adapter লাগানো অবস্থায় ব্যাটারী ছাড়াই ল্যাপটপটি চালু করার চেষ্টা করুন। এ অবস্থায় ল্যাপটপটি চালু হয়ে গেলে বুঝতে হবে, সমস্যাটা এখানেই। এক্ষেত্রে শুধু ব্যাটারীটা বদলে ফেললেই হবে। কিন্তু তাতেও সমস্যা না মিটলে, চলুন পরের ধাপে। আরও পড়ুন – চার্জে দিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে কি ক্ষতি হয়?
Hard Reset করে দেখা
এবার চলুন, এটিকে একবার Hard Reset করে দেখি। ল্যাপটপের ছোট-খাট যে কোন সমস্যা সমাধানে এই সহজ প্রক্রিয়াটি খুবই কার্যকর। ল্যাপটপ যেহেতু চালুই হচ্ছে না, এটাকে তো আলাদা করে বন্ধ করার কিছু নাই। তবে সচল ল্যাপটপে Hard Reset করতে হলে, প্রথমেই এটাকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। এর জন্য আগের ন্যায় পাওয়ার এ্যাডাপ্টার এবং এক্সটার্নাল ডিভাইসগুলো আগেই খুলে রাখুন। সম্ভব হলে ব্যাটারীটাকেও খুলে আলাদা করে ফেলুন। এবার ল্যাপটপের পাওয়ার বাটনটি চাপ দিয়ে ধরে রাখুন ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড। বেশিরভাগ ল্যাপটপ মডেলের ক্ষেত্রে এইটুকু সময়ের মধ্যেই কোন হার্ডওয়্যার বা সার্কিটে জমে থাকা ইলেকট্রিসিটি ডিসচার্জ হয়ে যায়। এরপর ল্যাপটপটিতে ব্যাটারী সংযুক্ত করে এবং Power Adapter লাগিয়ে চালু করার চেষ্টা করুন।
External Display কনেক্ট করা
এ পর্যায়েও আপনার ডিভাইসটিকে চালু করতে না পারলে বুঝতে হবে, সম্ভবতঃ আপনার ল্যাপটপের কোন একটা হার্ডওয়্যার ঠিকঠাক কাজ করছে না। অনেক সময় দেখা যায়— ল্যাপটপ চালু হয়েছে, হার্ডডিস্ক এবং কুলিং ফ্যানের শব্দও পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু display অন্ধকার। এরকম হলে, HDMI cable দিয়ে একটা External Display বা Monitor লাগিয়ে চেক করে দেখুন স্ক্রিণ দেখা যাচ্ছে কিনা। স্ক্রিণ আসলে তো বুঝেই গেলেন, display বদলাতে বা মেরামত করতে হবে। তবে এতেও কাজ না হলে, এটাকে হয়তো নিকটস্থ সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে।
Safe Mode-এ boot করার চেষ্টা করা
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ল্যাপটপটি চালু হচ্ছে, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম boot করতে পারছে না। BIOS স্ক্রিণ থেকেই বার বার রিস্টার্ট হচ্ছে বা একই অবস্থানে আটকে আছে। সাধারণত অপারেটিং সিস্টেমে সমস্যা হলে এমন ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে এটাকে Safe Mode-এ বুট করার চেষ্টা করা যেতে পারে। অভিজ্ঞতা থাকলে Operating System Repair Tool ব্যবহার করে এই অবস্থা থেকে অপারেটিং সিস্টেমের সমস্যা সারিয়ে তোলা যায়; হার্ডডিস্ক format না করেই।
CMOS Battery খুলে লাগানো
এবারের কাজটি করতে হলে, আপনার কিছুটা এডভান্স লেভেলের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবে। সেটা ছাড়া কেবল কয়েকটা ইউটিউব ভিডিও দেখে, এ পর্যায়টি নিজে নিজে করতে যাওয়া ঠিক হবে না। এছাড়া এই পর্যায়ে কিছু যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন হবে। অভিজ্ঞতা ও প্রফেশনাল টুল ছাড়া এ পর্যায়টি সম্পাদন করতে গিয়ে বিপদ বাড়ানোর ঝুঁকি নেবেন না। বিশেষতঃ আপনার ল্যাপটপটি এখনো ওয়ারেন্টি সার্ভিসের আওতায় থাকলে— এই পর্যায়টি বাদ দিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ল্যাপটপের স্ক্রু খোলা হলে, সেটার ওয়ারেন্টি ভয়েড হয়ে যায়। আরও পড়ুন – ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
- শুরুতে স্ক্রু-ড্রাইভার ব্যবহার করে সাবধানে ল্যাপটপের স্ক্রুগুলো খুলে ফেলুন। স্ক্রুগুলো খুলে ফেলার সময় সেগুলো পাশে গুছিয়ে রাখতে হবে, যাতে লাগানোর সময় সহজ হয়।
- এবার কেসিংটি সাবধানে খুলে মাদারবোর্ডটি খেয়াল করুন। দেখবেন, গোল চাকতির মত একটা ব্যাটারী আছে; যাকে CMOS Battery বলা হয়। আপনার ল্যাপটপ বন্ধ থাকলেও এই ব্যাটারীটি আপনার BIOS বা UEFI settings গুলো সংরক্ষণ করে। এবার ব্যাটারীটি খুলে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে আবার সংযুক্ত করুন।
- ল্যাপটপটা তো খুলেই ফেলেছেন, তাই এ পর্যায়ে মাদারবোর্ডে লাগানো অন্যান্য হার্ডওয়্যারগুলো, যেমন: প্রসেসর, কুলিং ফ্যান, র্যাম, হার্ডডিস্কের কানেকশনগুলো পরীক্ষা করে নিতে পারেন। ল্যাপটপের বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই স্ক্রু দিয়ে লাগানো থাকে। এগুলোকে নেড়েচেড়ে টাইট করে দিন। র্যামটা খুলে লাগান। তবে সাবধান, উপযুক্ত দক্ষতা না থাকলে এটা কখনোই করতে যাবেন না। আরও পড়ুন – নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়
এতকিছু করেও আপনার ল্যাপটপটি সচল না হলে, এটা মনে হয় আপনার আয়ত্তের বাইরে (যদি আপনি নিজেই একজন দক্ষ মেকানিক না হয়ে থাকেন)। ওয়ারেন্টি থাকলে তো কথাই নেই। না থাকলে, নিকটস্থ কোন একটি ল্যাপটপ রিপেয়ার শপে যোগাযোগ করুন।
Vertech, নতুন ল্যাপটপ কেনার একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান; যেখানে আপনি পাবেন সর্বাধুনিক সব ল্যাপটপ এবং একসেসোরিজ। ল্যাপটপ বিষয়ক যে কোন সেবা পেতে আজই চলে আসুন Vertech-এ।

Borhan Uddin Alif is a writer with years of experience, focusing on technology, marketing, and storytelling, and enjoys exploring various niches and topics.