ল্যাপটপের চার্জার অরিজিনাল কিনা বোঝার উপায় কী?
ধরুন, আপনি গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন মিটিংয়ে আছেন, ক্লায়েন্টের সঙ্গে স্লাইড শেয়ার করতেই যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে ল্যাপটপের ব্যাটারি লো হয়ে গেল। আপনার ল্যাপটপ চার্জারের সাথে কানেক্টেড তাও চার্জ হচ্ছে না। এমতবস্থায় প্যানিক হওয়া স্বাভাবিক, কারন আপনি বুঝতে পারছেন না আসলে সমস্যাটা কোথায়।
সত্যি বলতে, এই ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য অনেক কারন থাকতে পারে, তারমধ্যে অন্যতম হলো নকল বা মানহীন চার্জার, যা বাইরে থেকে দেখতে একদম অরিজিনাল চার্জারের মত মনে হলেও ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আর নকল চার্জার যে শুধু ল্যাপটপের ব্যাটারি খারাপ করে তা না, এটি ল্যাপটপ গরম করে, পারফরম্যান্স স্লো করে এছাড়া বড় ধরনের ঝুঁকি তো আছেই। তাই নিশ্চিত হওয়া দরকার যে আপনার চার্জার অরিজিনাল এবং নিরাপদ কিনা । আপনি যদি ল্যাপটপের জন্য অরিজিনাল চার্জার কিনতে চান বা আপনার বর্তমান চার্জারটি আসল কিনা যাচাই করতে চান, তাহলে এই ব্লগেই আশা করি আপনি আপনার কাঙ্খিত উত্তর খুঁজে পাবেন।
কেন অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করা জরুরি
যেকোনো ডিভাইসের ক্ষেত্রেই অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করা জরুরি।। ল্যাপটপ কিংবা অন্য যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পাওয়ার কনসাম্পশনের সক্ষমতার ভিন্নতা রয়েছে, যার ফলে আমরা যখন ভিন্ন ডিভাইসের চার্জার কিংবা নকল চার্জার ব্যবহার করি তখন ব্যাটারীর উপর চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপ থেকে ল্যাপটপের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে, এবং দীর্ঘ সময় এমন চলতে থাকলে ব্যাটারী ডেড ও হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে আমরা ডেডিকেটেড চার্জার ব্যবহার করলে এধরণের সমস্যাগুলো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এছাড়াও অরিজিনাল চার্জারে অনেক সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে যেমন শর্ট সার্কিট প্রটেকশন এবং ওভারহিট প্রটেকশন যা ল্যাপটপকে ঝুঁকি থেকে বাঁচায়। নকল চার্জার ব্যবহার করলে ল্যাপটপের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমনকি আগুন লাগার মতো বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই সবসময় অফিসিয়াল বা বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনা অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন, যাতে আপনার ল্যাপটপ দীর্ঘদিন ভালো থাকে এবং নিরাপদে চার্জ হয়। আরও পড়ুন – ল্যাপটপ ভালো রাখতে করণীয়
ল্যাপটপ চার্জার অরিজিনাল কিনা বুঝবেন যেভাবে
অরিজিনাল ল্যাপটপ চার্জার চেনা খুব একটা কঠিন নয়। নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই অরিজিনাল চার্জার চিনতে পারবেন।
ব্র্যান্ড লোগো এবং লেবেল চেক করুন
একটি ল্যাপটপ চার্জার অরিজিনাল কিনা বোঝার অন্যতম সহজ উপায় হলো ব্র্যান্ডের লোগো ও লেবেল পরীক্ষা করা। অরিজিনাল চার্জারে লোগো স্পষ্ট ও সহজে চোখে পড়ে। পাশাপাশি লেবেলে ভোল্টেজ, অ্যাম্পিয়ার এবং ওয়াটেজ সঠিকভাবে উল্লেখ করা থাকে। আসল চার্জারের লেবেল সাধারণত উচ্চমানের প্রিন্টে করা হয়, যেখানে কোনো বানান ভুল বা ঝাপসা লেখার সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে, নকল চার্জারে বানান ভুল, হালকা রঙের ব্যবহার বা অস্পষ্ট লেখা পাওয়া যায়। তাই চার্জার কেনার সময় লোগো ও লেবেল ভালোভাবে যাচাই করলে অনেক ক্ষেত্রেই সহজে বোঝা যায় এটি আসল নাকি ডুপ্লিকেট।
বিল্ড কোয়ালিটি
অরিজিনাল চার্জারের বিল্ড কোয়ালিটি সবসময় উন্নত মানের হয়। এবং চার্জারের প্লাস্টিক শক্ত এবং মজবুত হয়, যা দীর্ঘসময় ব্যবহারে ভাঙে না বা সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ক্যাবল মোটা এবং টেকসই হয়, ফলে বারবার বাঁকানো বা টানলেও এটি সহজে ছিঁড়ে যায় না। অন্যদিকে, নকল চার্জারের প্লাস্টিক সাধারণত নিম্নমানের হয়, যা দ্রুত ভেঙে যায় বা ফেটে যায়। এ ছাড়া এর ক্যাবল অনেকটাই পাতলা থাকে, ফলে ব্যবহারের সময় ছিড়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চার্জারের বিল্ড কোয়ালিটি পরীক্ষা করা জরুরি।
সিরিয়াল নাম্বার ও হোলোগ্রাম স্টিকার
অরিজিনাল চার্জারে সাধারণত একটি ইউনিক সিরিয়াল নাম্বার বা বারকোড থাকে, যা ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যাচাই করা যায়। এই নাম্বার বা কোড প্রতিটি চার্জারের জন্য আলাদা থাকে, যা নকল পণ্যে সাধারণত থাকে না। কিছু ব্র্যান্ড তাদের চার্জারে হোলোগ্রাম স্টিকার যুক্ত করে, যা নিরাপত্তার অতিরিক্ত প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এসব স্টিকার আসল হলে আলো পড়লে রঙ পরিবর্তন করে বা বিশেষ মার্ক দেখা যায়। অন্যদিকে, ডুপ্লিকেট চার্জারে এমন স্টিকার থাকে না, থাকলেও সেগুলো মানসম্মত নয়। তাই চার্জারের সিরিয়াল নাম্বার ও হোলোগ্রাম স্টিকার যাচাই করা আসল-নকল চেনার কার্যকর উপায়।
ওজন ও তাপমাত্রা
আসল চার্জারের ভেতরে উচ্চমানের ট্রান্সফর্মার ও সার্কিট থাকে, ফলে এটি সাধারণত কিছুটা ভারী হয়। অন্যদিকে, নকল চার্জার তুলনামূলক হালকা হয় কারণ এতে নিম্নমানের বা কম উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আসল চার্জার দীর্ঘ সময় ব্যবহারে স্বাভাবিকভাবে সামান্য গরম হয়, যা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু নকল চার্জার ব্যবহারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যায়, এমনকি অনেক সময় হাতেই ধরা যায় না। এই অতিরিক্ত তাপ ল্যাপটপের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই চার্জারের ওজন ও ব্যবহারের সময় তাপমাত্রা লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় চার্জারটি অরিজিনাল নাকি নকল।
চার্জিং পারফরম্যান্স
অরিজিনাল চার্জারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ করতে পারে। আসল চার্জার ল্যাপটপের জন্য প্রয়োজনমত ভোল্টেজ ও কারেন্ট দেয়, ফলে ব্যাটারি সুরক্ষিত থাকে। অন্যদিকে, নকল চার্জারের কার্যক্রমের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম থাকেনা বললেই চলে, কখনো ধীরগতি, কখনো দ্রুতগতি, কখনো আবার একদম বন্ধই হয়ে যায়। । এতে ব্যাটারির চার্জ সাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যাটারির হেলথ কমে যায়। অনেক সময় নকল চার্জার ব্যবহারে ল্যাপটপ চার্জ হওয়ার বদলে চার্জ কমতেও থাকে। তাই চার্জারের চার্জিং পারফরম্যান্স আসল-নকল বোঝার অন্যতম নির্ভরযোগ্য উপায়।
প্যাকেজিং ও ডকুমেন্টেশন
অরিজিনাল চার্জার সাধারণত সঠিক ব্র্যান্ডেড প্যাকেজে আসে, যেখানে পণ্যের নাম, মডেল নাম্বার, ম্যানুফ্যাকচারিং ডিটেইলস এবং ওয়ারেন্টি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ থাকে। এসব প্যাকেজে সাধারণত সিল থাকে, যা খোলার আগে অক্ষত থাকে। আসল চার্জারের সাথে প্রায়শই একটি ওয়ারেন্টি কার্ড বা ইউজার ম্যানুয়ালও দেওয়া হয়, যা ক্রেতাকে বাড়তি নিশ্চয়তা দেয়। অপরদিকে, নকল চার্জার অনেক সময় কোনো ব্র্যান্ডিং ছাড়াই সাধারণ প্লাস্টিক মোড়কে বিক্রি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এতে সঠিক তথ্য উল্লেখ থাকে না। তাই চার্জারের প্যাকেজিং ও ডকুমেন্টেশন ভালোভাবে দেখলেই আসল ও নকলের মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয়।
ল্যাপটপ চার্জার কেনার সময় করণীয় টিপস
অরিজিনাল চার্জার কিনতে গেলে শুধুমাত্র দাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। বাজারে অনেক নকল চার্জার অরিজিনালের মতো দেখায়। তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই আপনি নিরাপদভাবে আসল চার্জার কিনতে পারবেন:
- ট্রাস্টেড শপ থেকে কেনা: সবসময় অফিসিয়াল ব্র্যান্ড শোরুম বা বিশ্বস্ত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে চার্জার কিনুন।
- মূল্য যাচাই: অতি সস্তা চার্জার সাধারণত নকল। দাম অনেক কম হলে বুঝা উচিত জিনিসটি নকল হতে পারে।
- গ্যারান্টি ও রিটার্ন পলিসি: অরিজিনাল চার্জারের সাথে সাধারণত গ্যারান্টি/ওয়ারেন্টি থাকে। কেনার আগে ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন নীতি যাচাই করুন।
- অনলাইন রিভিউ দেখুন: আগের ব্যবহারকারীর মতামত এবং রেটিং দেখে চার্জারটির মান যাচাই করে নিন। আরও পড়ুন – ল্যাপটপের মাদারবোর্ড নষ্ট হওয়ার কারণ ও সমাধান
পরিশেষ
আশা করি ব্লগটি পড়ে আপনি ল্যাপটপের অরিজিনাল চার্জার চেনার উপায়গুলো ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। ল্যাপটপের জন্য অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করা সত্যিই খুব জরুরি। নকল বা কম মানের চার্জার শুধু ব্যাটারি ক্ষতি করে না, বরং ল্যাপটপকে ঝুঁকিতে ফেলে। অনেক সময় নকল চার্জার ব্যবহারে ল্যাপটপ গরম হয়ে যায় বা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যা ব্যবহারকারীর জন্য বিরক্তিকর এবং বিপজ্জনক। আসল চার্জার ব্যবহার করলে ল্যাপটপ নিরাপদ থাকে, চার্জিং মান বজায় থাকে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে। আসল চার্জার চেনার জন্য ব্র্যান্ড লোগো, লেবেল, সিরিয়াল নাম্বার, হোলোগ্রাম স্টিকার এবং চার্জারের ওজন ও তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। চার্জার ব্যবহারের সময় প্লাগ ধরে টানা বা অতিরিক্ত গরম স্থানে রাখা এড়ানো উচিত। আর আপনি যদি অথেন্টিক ল্যাপটপ কিনতে চান, যেখানে নকল চার্জারের ঝুঁকি থাকবে না, তাহলে নিশ্চিন্তে Vertech থেকে অর্ডার করতে পারেন । এখানে পাবেন অফিসিলায় প্রডাক্ট, অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি সুবিধা এবং নিরাপদ কেনাকাটা।
FAQ
ল্যাপটপের চার্জার অরিজিনাল কিনা নিশ্চিত করার সবচেয়ে সহজ উপায় কী?
ব্র্যান্ড লোগো, সিরিয়াল নাম্বার, হোলোগ্রাম স্টিকার এবং লেবেলের তথ্য যাচাই করলেই সহজেই বোঝা যায় চার্জার আসল কিনা। এছাড়া চার্জারের ওজন, বিল্ড কোয়ালিটি ও চার্জিং পারফরম্যান্সও গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
নকল চার্জার ব্যবহার করলে কি ক্ষতি হতে পারে?
নকল চার্জার ল্যাপটপের ব্যাটারি দ্রুত খারাপ করে, অতিরিক্ত গরম করে, পারফরম্যান্স কমায় এবং এমনকি শর্ট সার্কিট বা আগুন লাগার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার না করলে কি হবে?
নকল বা মানহীন চার্জার ব্যবহার করলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়, ল্যাপটপ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং এছাড়া ল্যাপটপের মাদারবোর্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চার্জারের ওজন ও তাপমাত্রা কিভাবে অরিজিনাল বোঝায়?
অরিজিনাল চার্জার সাধারণত কিছুটা ভারী এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহারের পর স্বাভাবিকভাবে সামান্য গরম হয়। নকল চার্জার তুলনামূলক হালকা এবং দ্রুত অতিরিক্ত গরম হয়।

Borhan Uddin Alif is a writer with years of experience, focusing on technology, marketing, and storytelling, and enjoys exploring various niches and topics.